প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান

ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয় আজিমপুরে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে  বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

দুপুর ২টার দিকে তারা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১১ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ডাকে একই সময় দেশের অধিকাংশ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।

একই দাবিতে গত অক্টোবরে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে টানা পাঁচদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সমিতির সদস্যরা। এছাড়া প্রেসক্লাবে মানবন্ধন, সংবাদ সম্মেলন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েও তারা সে সময় ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন।

ঢাকা জেলা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক রওশন আরা বেগম বলেন,  “ওই আন্দোলনের পর রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটির একটি মিটিং হয়েছিল, সেখানে দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সুপারিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

“সরকার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নিয়ে যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, সে অনুযায়ী আমরা বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছি। দুই বছর ধরে সেই আবেদন পড়ে আছে। কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না।”

সমিতির নেতারা জানান, বেসরকারি উদ্যোগকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করার লক্ষ্যে সরকার ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ প্রণয়ন করে। ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আরও দুটি নীতিমালা করা হয়।

নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যতীত প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’- নামে এ দুটি নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।

শিক্ষকদের ভাষ্য,  সরকার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নিয়ে যে নীতিমালা করেছে, সে অনুযায়ী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য দুই বছর আগে আবেদন করা হলেও তার বাস্তবায়ন তারা দেখছেন না।

ঢাকার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘হাইকেয়ার’ স্কুলের সভাপতি তারিকুল ইসলাম খান বলেন “আমাদের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে এমপিভুক্ত করার জন্য। সরকারের উচ্চ মহল থেকে আমরা দ্রুত এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত চাই।”

১১ দফা দাবি

>> প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর একসঙ্গে স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করতে হবে।

>> বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগের তারিখ হতে বেতন ভাতা দিতে হবে।

>> সব বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা।

>> সব বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ নিশ্চিত করা।

>> বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী উপযোগী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা।

>> সব বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ শতভাগ নিশ্চিত করা।

>> প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করা।

>> শিক্ষক-কর্মচারীদের মান উন্নয়নমূলক ট্রেনিংসহ সংশ্লিষ্ট সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

>> শতভাগ বিদ্যালয়ে আধুনিক মানসম্পন্ন প্রতিবন্ধীবান্ধব ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা।

>> প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর আধুনিক থেরাপি সরঞ্জাম সরবরাহসহ থেরাপি সেন্টার চালু করা।

>> ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানসহ আত্মনির্ভরশীল জীবন যাপনের নিশ্চয়তা প্রদান।

ঢাকা জেলা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নায়ার সুলতানা, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা তাহমিনা খান, শিরিন নাহার কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হাইকেয়ার স্কুলের সহকারী শিক্ষক পার্থ ঘোষ।

এসডিজি অর্জনে প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় সংযোজন করতে হবে: ঢাবি উপাচার্য

২০৩০ সালের মধ্যে দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল ধারায় সংযোজন করতে গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি বলছেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণের লক্ষে সকল ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে `ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও অংশগ্রহনের জন্য নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে উপাচার্য দাবি করেন।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “যাদেরকে আমরা সমাজে প্রতিবন্ধী হিসেবে উল্লেখ করি, তারা সাধারণ মানুষের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ এবং মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-চেতনা এবং কর্মদক্ষতা উন্নয়নে এই সংগঠনের সদস্যবৃন্দ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।”

পিডিএফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাবিহা বৈশাখীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহীদা জাহান এবং অকো-টেক্স গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বক্তব্য দেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাঈম মোল্লা অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।