বাঁশি বেচে, সুর তুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩৬ বছর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় ৩৬ বছর ধরে আসা–যাওয়া গণেশ চন্দ্র দাসের। এই ক্যাম্পাসে বসে তিনি বাঁশিতে সুর তোলেন, আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে বাঁশি বিক্রি করেন। এ থেকে তাঁর যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার।

গণেশের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উত্তর-পশ্চিম সড়কের একটি কালভার্টে বসে ৩৬ ধরে বাঁশি বিক্রি করেন। কখনো কখনো অবশ্য তাঁকে প্যারিস রোডের ল্যাম্পপোস্টের নিচেও দেখা যায়। ক্যাম্পাস ছাড়াও তিনি রাজশাহী শহর, বাঘা, নাটোর, বগুড়া সদর ও সান্তাহারে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেন।

Read More:অসহায় প্রতিবন্ধী শিশুর স্কুল রক্ষার দাবিতে কেরানীগঞ্জ অটিস্টিক বিদ্যালয় অভিভাবকরা মানববন্ধন ও অনশন করেন শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে। 

আলাপে আলাপে গণেশ বলেন, তিনি নিজের হাতে বাঁশি বানান। বাঁশি তৈরির প্রধান কাঁচামাল বাঁশ ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন। পরে নিজেই বানানো বাঁশি বিক্রি করেন। তাঁর কাছে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা মূল্যের বাঁশি পাওয়া যায়।

তাঁর বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি গান গাইতেন। বাড়িতে গানের নানা অনুষ্ঠান হতে দেখেছেন ছোটবেলায়। তখন থেকেই বাঁশির প্রতি তাঁর ভালোলাগা এবং বাঁশি বাজাতে শুরু করা। সুরের নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছে। চাইলেও এখন আর ছাড়তে পারেন না।

অনেকটা হতাশার সুরে এই বংশীবাদক বলেন, এখন বাঁশি নিয়ে ঘুরলেও লোকজন তেমন কাছে আসেন না। সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। শখের বশে কিছু মানুষ বাঁশি কিনে থাকেন। এক দিন বিক্রি হলে পাঁচ দিন বিক্রি হয় না। আগে বৈশাখী মেলা, ভর্তি পরীক্ষা, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে বাঁশি বেশি বিক্রি হতো। তখন প্রতিদিন এক থেকে দুই হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করতে পারতেন। এখন আয় অনেকটাই কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

গণেশের তিন ছেলে, সবাই বিয়ে করে নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। যা আয় করেন, তা দিয়ে গণেশ ও তাঁর স্ত্রী সাগরী রানীকে চলতে হয়। ১০ মাস ধরে স্ত্রী অসুস্থ। টাকার জন্য স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে জানান গণেশ।

তাঁর স্বপ্ন ছিল, একদিন অনেক বড় বংশীবাদক হবেন। সবাই তাঁকে একনামে চিনবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। তবুও বাকি জীবন বাঁশির সঙ্গেই কাটিয়ে দিতে চান তিনি। কথা শেষ হতেই বাঁশিতে সুর তোলেন, ‘পিঞ্জর খুলে দিয়েছি, যা কিছু কথা ছিল বলে দিয়েছি। যা-রে যাবি যদি যা…।’

Source of: Prothom Alo