কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের কিছু কথা – অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন

কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের কিছু কথা অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন

amader sastho
amader sastho

করোনার ৩য় ডেল্টা ভ্যারিয়েনট সময় সবাই যখন কোরবানির গরু কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমাকে অসহায় প্রতিবন্ধীদের খাবার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন অসহায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে পারি। আমার সহযোদ্ধা ফারজানা মৌসুমীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিভাবে একজন নারীর হয়ে হাজার ও অসহায় প্রতিবন্ধীদের মুখে হাসি ফোটায়। আল্লাহ তাআলা তাকে সুখ ও শান্তি দান করুন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদেরকে একদল ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এই বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান উপলক্ষে আজ শনিবার(২৭জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় কেরানীগঞ্জের ডাকপাড়া এলাকায় ফালগুন কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সজীব সোসাইটি ও কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিনামূল্যে এই চিকিৎসা প্রদান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের ৫০জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভারতের চেন্নাই আইয়ুশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ সারাভানান লক্ষসমানান, ভারতের চেন্নাই আইয়ুশ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হারিস, ভারতের চেন্নাই ইউনাইটেড হেলথ ট্যুরিজমের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা শাহিন শাহ, সজীব সোসসাইটর সেক্রেটারি কাম এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর মোঃ আইনুল হক ,কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্দী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন ,ডাঃ এম এ সোবহান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বুদ্ধি প্রতিবন্দী ও অটিস্টিক শিশুদের পিতা-মাতাদের কাছে তাদের সন্তানদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনে ভারতীয় চিকিৎসকগন সেইভাবে তাদের তাঃক্ষনিক চিকিৎসা প্রদান করেন। ভারতীয় চিকিৎসকগন বলেন, পর্যায়ক্রমে তারা বাংলাদেশে এসে আরো বুদ্ধি প্রতিবন্দী ও অটিস্টিক শিশুদের তারা চিকিৎসা প্রদান করবেন।অটিজম বাচ্চার খাবার, ঘুম ও ভিটামিন |
amader sastho
amader sastho
===============================
বেশিরভাগ অটিস্টিক ও এডিএইচডি এর বাচ্চার মধ্যেই বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এর ঘাটতি দেখা যায়। সাম্প্রতিক বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসায় তাই ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট এর বিপুল ব্যাবহার হয়ে আসছে।
ডায়েটঃ ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের বাচ্চার প্রাত্তাহিক খাবার এর ধরণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেমন, যে সব খাবারে গ্লুটিন ও কেসিন থাকে, সেগুল বাচ্চার মস্তিস্কে আসক্তি তৈরি করতে পারে এবং হাইপার একটিভিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে আশার কথা হল, আমাদের দেশে যে ধরনের খাদ্য আমরা খাই, যেমন ভাত, ডাল ইত্যাদিতে গ্লুটিন নেই।
কিন্তু, আটার মধ্যে গ্লুটিন অনেক পরিমানে থাকে। তাই আটার তৈরি যে কোন খাবার বাচ্চাকে দেয়া যাবে না। এমন কি দোকানে যে সব চিপস, চকলেট, প্রক্রিয়া জাত খাবার পাওয়া যায় তার সব গুলোর মধ্যেই গ্লুটিন রয়েছে। এমনকি চিকেন ফ্রাই তে ও আটা ব্যাবহার করা হয়। তাই এ সব খাবার বাচ্চাকে একদম বন্ধ রাখতে হবে। গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, গ্লুটিন এমনি একটি উপাদান যা বিশেষ শিশুদের মস্তিস্কের অপোয়েড রিসিপ্টর এর সাথে যুক্ত হয়ে হেরোইন/মরফিন এর মতই নেশার উদ্রেক ঘটাতে পারে।
তেমনি, সকল ডেইরি প্রোডাক্ট (দুঘদ জাতীয় খাবার) এ কেসিন নামক উপাদান থাকে, যা বিশেষ শিশু দের পরিপাক তন্ত্র পরিপাক করতে পারে না এবং হাইপার একটিভিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সকল প্রকার দুধ ও ডেইরি প্রোডাক্ট বন্ধ করে দেখা যেতে পারে যে বাচ্চার আচরনে কোন পরিবর্তন হয় কি না। যদি হাইপার একটিভিটি কমে আসে, তাহলে দুধের বিকল্প খাবার এ বাচ্চাকে অভ্যস্ত করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম খাইয়ে বাচ্চার ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
ঘুমঃ ঘুম আমাদের জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দেখা যায় অনেক বিশেষ শিশুরই ঘুমের সমস্যা রয়েছে এবং ঘুমের তারতম্মের জন্য তাদের মধ্যে আচরণের সমস্যা দেখা দেয় যেমন হাইপার একটিভিটি। প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের শরীরে মেলাটোনিন নামে একটি উপাদান তৈরি হয় যার কারনে আমাদের ঘুম আসে।
অনেক বিশেষ শিশু যে এই মেলাটোনিন ট্যাবলেট আকারে খাইয়ে তাদের ঘুমের উপকার পাওয়া গ্যাছে। মেলাটোনিন যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের দেহে উৎপাদিত হবার কথা, তাই এই মেলাটোনিন বাহির থেকে দীর্ঘদিন খাওয়ালেও বাচ্চার কোন সমস্যা হবার কথা নয়, এবং এটা তার জন্য নিরাপদ। তাই বিশেষ শিশুদের বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসায় অভিজ্ঞ কারো তত্ত্বাবধানে এই চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে।
মাল্টি ভিটামিনঃ জেনারেল মাল্টি ভিটামিন এর মাঝারি ডোজ ব্যাবহার করে বাচ্চার ঘুম এবং অন্ত্রের সমস্যার ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
ভিটামিন সিঃ গবেষণায় দেখা গ্যাছে নির্দিষ্ট ডোজের ভিটামিন সি ব্যাবহার করে অটিস্টিক বাচ্চার বার বার বিশেষ ধরনের অঙ্গ সঞ্চালন এর অভ্যাস এর উন্নতি ঘটেছে।
জিংকঃ অটিজম ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর বাচ্চাদের মধ্যে জিংক এর ঘাটতি দেখা যায়। জিংক এর ঘাটতির কারনে অনেক সময় বাচ্চাদের মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গ্যাছে, নির্দিষ্ট মাত্রায় জিংক বাচ্চাকে দেয়ার ফলে তাদের মনোযোগের বিশেষ উন্নতি ঘটে।
ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ এর কম্বিনেশন ব্যাবহার করার ফলে অটিস্টিক বাচ্চাদের আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ, মেলামেশা, ভাব বিনিময় করা ইত্যাদি তে উন্নতি দেখা যেতে পারে বলে গবেষণায় প্রমান পাওয়া যায়।
পিকনজেনলঃ পিকনজেনল শরীরে গ্লুটাথায়োন এর পরিমাণ বাড়ায় যা বাচ্চার শরীর থেকে টক্সিক মেটাল বের করে দেয়। অধিকাংশ অটিস্টিক ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর বাচ্চার শরীরেই এই গ্লুটাথায়োন এর পরিমাণ কম থাকে। পিকনজেনল আরও যে কাজ গুলো করে তা হল, শরীরে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, বাচ্চার মনোযোগ কোঅর্ডিনেসন বাড়ায় এবং হাইপার একটিভিটি কমায়।
কারনসাইনঃ এই সাপ্লিমেন্ট এর জোরাল এন্টি অক্সিডেন্ট ক্ষমতা সেই সাথে খিঁচুনি কমানোর ও সক্ষমতা রয়েছে। কথা বলার সক্ষমতা ও সামাজিক যোগাযোগ ও বাড়াতে পারে কারনসাইন।
amader sastho
amader sastho
ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিডঃ এই উপাদানের অভাবে হাইপার এক্টিভিটি, অন্যের সাথে ভাব বিনিময় এর সমস্যা, দুশ্চিন্তা, হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে হাত পা ছুড়া ইত্যাদি বেশি হতে পারে। মায়ের দুধের মাধ্যমে বা অন্যান্য শিশু খাদ্দের মাধ্যমে ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিড এর অভাব পূরণ না হলে সেই বাচ্চার অটিজম এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ২-৪ গুন বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিড সম্পুরক খাদ্য হিসাবে দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বিকাশ গত সমস্যা, হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার, অটিজম ইত্যাদির উন্নতি ঘটতে পারে।
উপরে যে সব ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট এর কথা বলা হল, তা অনেক কেই উপকার দেবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই সকল সম্পুরক খাদ্দের মাধ্যমে যে উন্নতি হবার সম্ভাবনা থাকে তা ১-২ দিনেই চোখে পড়বে না। অনেক সময় দৃশ্যমান উন্নতি পরিলক্ষিত হতে ২-৩ মাস সময় লাগে। আবার সব ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট ই একসাথে শুরু করা যায় না। শরীরে কোন কোন উপাদান এর ঘাটতি আছে, কোন টি বেশি আছে তা নিরুপনের জন্য অনেক সময় ডায়াগনস্টিক টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। তাই এই ধরনের বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসা শুরু করার আগে বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছেন এমন কারো পরামর্শ নিয়ে করাই ভাল।
amader sastho
amader sastho
প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবন দিতে কেরানীগঞ্জে মহতী উদ্যোগ কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রতিবন্ধীদের শারিরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটিয়ে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে স্বাবলম্বী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। এছাড়াও অটিজম হেলথ কেয়ার স্টোরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ থেরাপির মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ব্যতিক্রম ধর্মী এ বিদ্যালয়টির প্রতিবন্ধী শিশুরা নিজেদের যোগ্যতায় খেলাধুলায় বিশেষ আবদানের ন্বীকৃতি স্বরুপ আগামী বছর বিশেষ অলেম্পিক গেমস খেলতে জার্মানী যাবার সুযোগ পেয়েছে। কেরানীগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছের ডা. মো. জাকির হোসেন।
amader sastho
amader sastho
ডা. মো. জাকির হোসেন অটিজম এর উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ প্রশিক্ষন নিয়ে প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। মুজিব শতবর্ষে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় এ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধীদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে এ বিদ্যালয়টি। এ বিদ্যালয় থেকে প্রতিবন্ধীদের ২০টি হুইল চেয়ার ও ১৫টি হেয়ারিং এইড প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত ৫২৭০ জন প্রতিবন্ধী বিনামূল্যে এখান থেকে সেবা গ্রহন করেছে। এরমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জন প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক জীবনে পিরে এসেছে।
প্রতিবন্ধীদেরা এখান থেকে লেখা পড়ার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষন নিয়ে দেশ গড়ায় অংশ নিচ্ছে। এছাড়াও এখানকার প্রতিবন্ধী শিশুরা খলা ধুলার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুরা বেটমিন্টনে সরাদেশের মধ্যে চাম্পিয়ন হয়ে আগামী বছর জার্মানীতে বিশেষ আলেম্পিকে আংশ গ্রহন করার সুযোগ পেয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিত দেবনাথ সবসময় বিদ্যালয়াটির খোঁজ খবর নেন এবং বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেন। এছাড়াও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেরানীগঞ্জ রাজস্ব কামরুল হাসান সোহের ও উপজেলা শিক্ষ অফিসার মাজেদা সুলতানা বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফকরুল আশরাফ কতৃক এ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীরা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছে।
আমাদের স্বাস্থ্য বিডি ডট কম (http://amadersasthobd.com/)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।