জাতীয়করণ, উৎসব ভাতা এবং হতাশার ঈদ-বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি, বেসরকারি দুইটি ভাগে পরিচালিত, এর মধ্যে প্রায় ৯৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে পরিচালিত, এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীদের শতভাগ বেতন আদায় করতে এদেশের শিক্ষক সমাজের অনেক ত্যাগ,লাঞ্ছনা,অপমান,ধর্মঘট, মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ রেখে আন্দোলন, এমনকি রাজপথে রক্তাক্ত হতেও হয়েছে।খুব সহজে বা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা প্রদর্শন করে কোন আর্থিক সুবিধা এপর্যন্ত কোন সরকার দেয়নি,এ যেন প্রতিটি সরকারের সাথে শিক্ষকদের সাথে প্রতিপক্ষ সম্পর্ক, বর্তমান সরকারের সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা যিনি ব্যক্তিগত ভাবে শিক্ষকদের খুব সন্মান করেন, এই সরকারের আমলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্মরণকালের উন্নয়ন হয়েছে,যা এক বৈপ্লবিক উন্নয়ন বলা যায় অথচ এই সরকারের আমলে গঠিত জাতীয় পে-স্কেল কমিটি বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় পে-স্কেলের আওতায় আনার ক্ষেত্রে গড়িমসি বা অনীহা করেছিল,ফলে শিক্ষক সমাজ উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিলেন বেসরকারি শিক্ষকরা জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে,শেষ পর্যন্ত শিক্ষক দরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় পে-স্কেলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হল,এতে শিক্ষক/কর্মচারীরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল,

পরবর্তীতে সরকার সিদ্ধান্ত নিল আর পে- স্কেল দিবে না,প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা /কর্মচারীদের ৫% প্রবৃদ্ধি দিবেন,এতেও বাদ পড়ল হতভাগ্য বেসরকারি শিক্ষক/কর্মচারীরা। আবার হতাশার সাগরে বেসরকারি শিক্ষকরা,শুরু হল লেখালেখি, সংবাদ সম্মেলন, আন্দোলন , অবস্থান ধর্মঘট । শেষ পর্যন্ত দুইবছর পরে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বহু কাঙ্ক্ষিত ৫% প্রবৃদ্ধি ঘোষণা করেন, এতে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ ভীষণ আনন্দিত হয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানায়।
আসল ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ,শিক্ষকদের মনে নতুন করে আশার আলো দেখা দিল,সরকারের নিকট বেসরকারি শিক্ষক সমাজ মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জাতির জনকের শিক্ষা দর্শন শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানাতে থাকল,এমনকি বেশ কয়েকজন মাননীয় সাংসদ জাতীয় সংসদে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য দাবি জানালেন কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী চুপ,একেবারেই চুপ থাকলেন,এতে শিক্ষক সমাজ আবার হতাশ হলেন।
জাতীয়করণের দাবিতে হতাশ হয়ে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ আপাততঃ নতুনভাবে চাইলেন ১৭ বছর ধরে যে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছে,তা জাতি গঠনের কারিগরদের জন্য ২৫% উৎসব ভাতা লজ্জা ও হতাশার, মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে যেন উৎসব ভাতা শতভাগ দেয়া হয়।শিক্ষক সমাজ আশা করেছিল বিএনপির দেয়া ২৫% উৎসব ভাতার এবার বুঝি অবসান হতে যাচ্ছে,এমনকি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের দুইটি ভার্চুয়াল সভায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শতভাগ উৎসব ভাতা শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবী বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ।এমপিও নীতিমালাতে উৎসব ভাতার কথা যুক্ত হওয়ায় সকলেই ধরে নিয়েছিল মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং শিক্ষকদের নিকট স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য সরকার অগ্রসর হচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত সেই ২৫% উৎসব ভাতাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল,যা শিক্ষকদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে,যা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মোটেই সুখকর নয়।
না বললেই নয় মুজিববর্ষে সরকার বঙ্গবন্ধু কে জানার ও মুজিব আদর্শকে নতুন প্রজন্ম তথা শিক্ষার্থীদের নিকট ছড়িয়ে দিতে অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন,যার অধিকাংশ কর্মসূচি সমগ্র মুজিববর্ষ ধরেই নতুন প্রজন্ম/ শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের মাধ্যমে সারাদেশের জনগণের নিকট পৌছে দিতে অতিমহামারি করোনাকালীন সময়েও জীবনের ঝুকি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ কাজ করে যাচ্ছেন,শুধু তাই নয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত ইতিহাস শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরে পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে,যার ফলে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে।
শিক্ষকরা দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত প্রাণ, অথচ তাদের ন্যুনতম দাবি বার বার উপেক্ষিত, এরা কারা,কাদের জন্য জাতি গড়ার কারিগররা অবহেলিত, কারা সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে,তাহলে কি শিক্ষকদের দাবি আদায়ে অতীতের পথেই হাটতে হবে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ধর্মঘট /অবস্থন ধর্মঘট করতে হবে?না, শিক্ষক সমাজ চায় দ্রুত সরকারের বোধোদয় হোক,দূরত্ব সৃষ্টিকারীদের অবসান হোক এবং মুজিববর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের শুভ সূচনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই হোক।
মোঃ মজিবুর রহমান বাবুল
সাধারণ সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।
amadersasthobd.com ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।