প্রেমের টানে সুন্দরবন পেরিয়ে, নদী সাঁতরে ভারতে বাংলাদেশি তরুণী

কথায় বলে প্রেমে পড়লে প্রেমিক যুগলের কাছে অসম্ভব বলে কিছুই থাকে না। প্রেম মানে না কোনো বাধা-বিপত্তি, সীমান্ত কিংবা কাঁটাতার। তাই যেন আবারও দেখা গেল বাংলাদেশি এক তরুণীর কাণ্ডে। বাঘের ভয়কে পরোয়া না করে একা সুন্দরবনের জঙ্গল পার হয়ে, পরে উত্তাল নদী সাঁতরে প্রেমের টানে ভারতে আসেন বাংলাদেশি ওই তরুণী। বিয়েও করেন মনের মানুষকে। কিন্তু বাঁধ সেধেছে ‘বেরসিক’ আন্তর্জাতিক আইন। কারণ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ওই আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে, আপাতত ঠিকানা হয়েছে কারাগার। আন্তর্জাতিক আইনে অনুমতি ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে তা অবৈধ বলে গৃহীত হয়। কিন্তু সে কথা মাথায় রাখেননি সাতক্ষীরার বাসিন্দা কৃষ্ণা মন্ডল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কৃষ্ণার সঙ্গে পরিচয় হয় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার রানিয়ার বাসিন্দা অভীক মন্ডলের। সেই পরিচয় গড়ায় প্রেমে। অল্প সময়ের মধ্যেই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেন তারা।

সাজিদ প্রেমাদাসা হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী!

এরপরই কৃষ্ণা ঠিক করেন তিনি বিয়ে করবেন অভীককে। প্রেমিককে বিয়ে করতে হলে আসতে হবে ভারতে, নেই পাসপোর্ট। তাই নেওয়া হয়নি ভিসা। কিন্তু প্রেম কি পাসপোর্ট ভিসার ধার ধারে! তাইতো পরিবারের কাউকে না জানিয়ে দিন চারেক আগে সুন্দরবনের উত্তাল নদী, ভয়াল জঙ্গল পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার দুঃসাহসিক পরিকল্পনা করে বসেন কৃষ্ণা। ঝুঁকি আছে জেনেও একাই জঙ্গল পেরিয়ে, নদী সাঁতরে ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন।

সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ২৮২ ভারতীয় সেনার দেহাবশেষ উদ্ধার

এরপর কালীঘাটে গিয়ে অভীক ও কৃষ্ণা বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি পৌঁছাতেই বেশিক্ষণ চাপা থাকেনি কৃষ্ণার এমন দুঃসাহসী প্রেম কাহিনী। এক কান দুই কান করে খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় নরেন্দ্রপুর থানা পুলিশের কাছে। তারপর ভারতে প্রবেশের যথাযথ নথি দেখাতে না পারায় শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কৃষ্ণাকে। মঙ্গলবার তাকে তোলা হয় বারুইপুর মহকুমা আদালতে। অনুপ্রবেশের অভিযোগে আপাতত তাকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।

আদালতে কোনো মন্তব্য করেননি কৃষ্ণা। কোর্ট চত্বরে তার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও দেখা যায়নি। পরে নরেন্দ্রপুর এলাকায় কৃষ্ণার শ্বশুরবাড়িতে গেলে জানা যায়, স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ভয়ে পালিয়েছেন স্বামী অভীক। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণাকে আইনি সহায়তা দিতে পারে ভারতের মহিলা কমিশন। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আশ্বাস মিলেছে বিচার বিভাগ থেকেও। ঘটনাটি জানানো হয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে। কৃষ্ণার শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশী সরলা দাস বলেন, মেয়েটি বাংলাদেশি। শুনেছি অনেক কষ্ট করে এদেশে এসেছে। বিয়েও হয়েছে, তবে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমি এর থেকে বেশি কিছু জানি না।

তসলিমা নাসরিনকে কী উপহার দিলেন শ্রীলেখা?

এই ব্যাপারে নরেন্দ্রপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (আইসি) অনির্বাণ বিশ্বাস বলেন, মেয়েটির বক্তব্য অনুযায়ী সে সুন্দরবনের নদী জঙ্গল পেরিয়ে এদেশে এসেছে। তার বলা পথ আমরা যাচাই করে দেখেছি। এখনো পর্যন্ত তার বক্তব্য সত্যি বলেই আমাদের মনে হয়েছে। তবে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার যে বাড়িতে তারা থাকতেন সেটি ভাড়া বাসা। প্রতিবেশীরা সম্পূর্ণ তথ্য দিতে পারছেন না। অন্যদিকে তার স্বামী পালিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ তথ্য পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশে মেয়েটির পরিবারকে পরিস্থিতি জানানোর চেষ্টা করছি। পুরো বিষয়টি বিচারাধীন। তবে এটুকু বলতে পারি মেয়েটির বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।

Source: samaka