সাম্প্রতিক সময়ে অক্সফোর্ডে পড়েছেন যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা

The University of Oxford is a collegiate research university in Oxford, England. There is evidence of teaching as early as 1096, making it the oldest university in the English-speaking world and the world’s second-oldest university in continuous operation.
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শোনেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এটি প্রায়ই র‍্যাংকিংয়ে কিংয়ে প্রথম সারিতে থাকে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হলেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতাবলে অর্জন করে নিচ্ছে তা। এমনই কয়েকজন শিক্ষার্থীর অক্সফোর্ড জয়ের গল্পটা জেনে নেওয়া যাক এই লেখায়।

আনিশা ফারুকের নাম হয়ত অনেকেই শুনে থাকবেন। যেখানে অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পাওয়াটাই অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার, সেখানে আনিশা শুধুমাত্র অক্সফোর্ডে টিকেই ক্ষান্ত হননি, নির্বাচিত হয়েছেন অক্সফোর্ড ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও।

এ সংগঠনটি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়েই কাজ করে না, জাতীয় উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম এবং এ বিষয়ক নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা আনিশা ২০১৯-২০২০ মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শাখা লেবার ক্লাবের কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে অক্সফোর্ড জয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুনজেরিন শহীদের কথা জানা আছে সবারই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘অ্যাপ্লায়েড লিঙ্গুয়িস্টিক অ্যান্ড সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশন’ বিষয়ে মাস্টার্সের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি তিনি অর্জন করেছিলেন শেভেনিং স্কলারশিপ সুবিধা। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

অক্সফোর্ড জয়ী আরেক শিক্ষার্থী আফরিন সুলতানা চৌধুরী। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার উইলিয়ামডন স্কুল অব প্যাথলজিতে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পেয়েছেন। পেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ।

তিনি এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়া তিনি সুইডেনের কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ লাভ করেছিলেন, যেখান থেকে প্রত্যেক বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার কে পাবেন সেটি ঠিক করা হয়।

অক্সফোর্ডে পড়তে যাওয়াদের মধ্যে আরো একজন হলেন ডা. মোঃ সাজেদুর রহমান শাওন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক এ শিক্ষার্থী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পপুলেশন হেলথের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি সুইডেনের কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে কর্মরত আছেন।

টাংগাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসাইনের অক্সফোর্ড যাত্রাটা বেশ প্রতিকুল ছিল। প্রথম দুবছর টানা অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পেলেও ফান্ডিংয়ের অভাবে তিনি সেখানে যেতে পারেননি।

কিন্তু তাতে দমে যান নি উজ্জ্বল। তৃতীয় বছর আবার আবেদন করে সেবার ফুল ফান্ডিং এর সুযোগ পান। এরই মাধ্যমে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেন তিনি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থী জাহিদ আমিন। তিনি এর আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। অক্সফোর্ডে পড়ার জন্য ‘অক্সফোর্ড ওয়েডেনফেল্ড অ্যান্ড হপম্যান’ বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছিলেন জাহিদ।

বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের নিজেদের স্বপ্নকে পূরণ করতে পেরেছেন, অন্যদিকে পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়বার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তাদের অনুকরণে আগামীতে আরো অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পড়বে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়, এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়াই যায়।